প্রায় ১ যুগ থেকে রাজত্ব করা Nokia ফোনের পতন হলো যেভাবে?
যেমন নাম - তেমন কাজ, তার কারণেই হয়তোবা মাএ কয়েক বছর আগেও মোবাইল ফোন মানেই মানুষ NOkia কে চিনতো।কোয়ালিটি ফুল,ব্যাটারী লাইফ,প্রতিরোধী সবকিছু মিলিয়ে Nokia'ই ছিল মোবাইল ফোনের বাদশাহ।
কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো যে বিশ্ব বিখ্যাত এ কোম্পানিটি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে চলে গিয়েছিল!? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১২ ই মে ১৮৬৫ সালে Fredrik Idestam (ফ্রেডরিক ঈদেষ্টাম),Leo Mechelin (লিও মিচেলিন) এবং Eduard Polón (এডুয়ার্ড পোলন) এর হাত ধরে পথ চলা শুরু হয় Nokia কোম্পানির। তবে শুরুর দিকে Nokia কোন মোবাইল ফোন কোম্পানি ছিল না, তারা উত্পাদন করতো বাল্ব, রাবার এবং কেবল। তবে মোবাইল ফোন নিয়ে Nokia কোম্পানির যাএা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। ঔ সময় টাতে ইউরোপ এর বাজারে মোবাইল ফোন বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু হয়, আর সেই সময়টাতে Nokia বাজারে পা রাখে। কোয়ালিটি ফুল প্রোডাক্ট, কম মূল্য ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে Nokia হয়ে উঠে সবার প্রিয় হ্যান্ডসেট। মাএ ২ Nokia'র সুনাম চড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে, এবং কি এশিয়া-ইউরোপ এর মোবাইল বাজার দখল করে রেখেছিল Nokia। তাঁর পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারতেও খুব সল্প সময়ের মধ্যে চড়িয়ে পড়েছে Nokia মোবাইল। ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে Nokia মোবাইল বাজার এ রাজত্ব করে এসেছে।
Nokia তার পণ্যের মাধ্যমে তার বক্ত দের মন জয় করে নেয়। ঔ সময় বাজারে অন্যান্য কিছু মোবাইল কোম্পানি ও ছিল কিন্তু Nokia ব্যবহারকারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল সর্বাধিক।
দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোনের প্রতিযোগিতামূলক বাজারের Nokia'র মুখোমুখি হওয়ার মতো কোনো কোম্পানি ছিল না। তারপর, Nokia এর প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে এসে দাড়ালো বর্তমান বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন কোম্পানি Apple, iPhone। ২০০৭ সালে iphone বাজারে ছাড়া হয় যা মানুষকে আরেকটু বাস্তবিক অনুভূতি দেয়। iPhone ছিল বাজারের প্রথম স্মার্টফোন যাতে টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়, এবং এই নতুন উদ্ভাবন টি ক্রেতাদের মন কেড়ে নেয়। কোয়ালিটি ফুল প্রোডাক্ট দিয়ে Nokia' র পাশাপাশি Apple ও মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয়। এবং তার কিছুদিনের মধ্যে iPhone হয়ে উঠে সবার প্রিয় ফোন। iPhone এর সাথে পাল্লা দিতে Nokia ও বাজার টাচ স্ক্রিন ফোন ছাড়ে। iPhone এর কারণে Nokia'র রেভিনিউ কমে যায়, তারপরও তারা পাশাপাশি চলছিল।
তার ১ বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ এ নেমে আসে দুর্যোগ। Google বাজারে ছাড়ে বর্তমান সময়ের সবছেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড যা ছিল ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম অর্থাৎ যেকেউ চাইলেই তার স্মার্টফোন "অ্যান্ড্রয়েড" ফ্রি তে ব্যবহার করতে পারবে। Google এর মতো এত বড় কোম্পানি এবং ফ্রি তে এই অপারেটিং সিস্টেম বাজারে ছাড়ার পর অন্যান্য সব বড় বড় মোবাইল কোম্পানিগুলো তথা Samsung, LG, HTC ইত্যাদি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করা শুরু করলো। আর ধীরে ধীরে অ্যান্ড্রয়েড সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠে। তাই যেসব কোম্পানি তাদের ফোনে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতো তারা বাজারে রাজত্ব করতে শুরু করলো।
অন্যদিকে Nokia একেবারেই অ্যান্ড্রয়েড কে না করে দিল, তারা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করবেনা বলেই ঘোষণা দিল। তাই তারা তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম Symbian(সিম্বিয়ান) এর উন্নতি সাধন করতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হলো না, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করা ফোন গুলো তথা Samaung, LG, HTC বাজার দখল করে নিল।
২০১০ সাল, অর্থাৎ ক্ষতির ২ বছর পর Stephen Elop কে Nokia'র নতুন CEO হিসেবে ঘোষণা দেয়, তিনি Microsoft এ কাজ করেছিলেন। Stephen Elop কে সাথে নিয়ে Nokia Google এ যাওয়ার প্লান করে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড কে বেছে নেওয়া জন্য। কিন্তু Stephen Elop বলেন আমরা যদি অ্যান্ড্রয়েড এ যাই তাহলে আমরাও আর ১০ টি মোবাইল কোম্পানির মতো হয়ে যাব, যার ফলে তাদের আর অ্যান্ড্রয়েড এ যাওয়া হলো না। তারপর Stephen Elop এর যুক্তিতে তারা চলে যায় মাইক্রোসফট এর কাছে।
Nokia আর Maicrosoft চুক্তিবদ্ধ হয় এবং Maicrosoft এর অপারেটিং সিস্টেম এবং তাদের হার্ডওয়্যারকে যুক্ত করে Nokia বাজারে ছাড়ে লুমিয়া নামের একটি সিরিজ যা বাজারে খুব খাপারভাবে ফ্লপ হয়। কারণ মোবাইলের ফোন এ Windows অপারেটিং সিস্টেম ক্রেতাদের কাছে এত ভাল লাগে নি। যার ফলে আরো একবার ধসে পড়ল Nokia। আর এই খারাপ সময়ে নতুন CEO Stephen Elop কৌশলে চক্রান্তে Nokia কে মাত্র 7 বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন Microsoft এর কাছে।
প্রায় ১ যুগ থেকে রাজত্ব করে যাওয়া একটি কোম্পানি এভাবে কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য একেবারে ডুবে গেল।




No comments